রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন
প্রথম আলো : পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, দলবাজি—অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বলিউডের এসব কদর্য রূপ অনেকের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে, বলিউডের রঙিন দুনিয়ায় জায়গা করে নিতে চাইলে একজনকে হতে হবে এই জগতেরই কোনো প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান, কিংবা মাথার ওপর থাকতে হবে কোনো ‘গডফাদার’। এর কোনোটাই ছিল না সুশান্তের। বলিউডে এমন শিল্পীদের বলা হয় ‘আউটসাইডার’ বা ‘বহিরাগত’। পদে পদে তাঁদের উপহাসের শিকার হতে হয়, একটা সুযোগের জন্য সংগ্রাম করতে হয় রাত–দিন। সুশান্ত এরপরও নিজের মেধা দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন, অর্জন করেছেন সবার ভালোবাসা। বলিউডে নিজ গুণে খ্যাতি পাওয়া এমনই কয়েকজন বহিরাগতকে নিয়ে আজকের প্রতিবেদন। লিখেছেন দেবারতি ভট্টাচার্য।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
ভারতের উত্তর প্রদেশের ছোট্ট শহর বারেলি থেকে উঠে আসা প্রিয়াঙ্কার স্বপ্ন এখন আকাশ ছুঁয়েছে। বিশ্বসুন্দরী খেতাব জয়ের পর ধীরে ধীরে বলিউডে নিজের ভিত পোক্ত করেন তিনি। এমনকি হলিউডের খাতায় নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেন বলিউডের এই ‘দেশি গার্ল’। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিকিৎসক, মা-ও তাই। তবে মা-বাবার পথে না গিয়ে প্রিয়াঙ্কা ছোটেন অভিনয়ের দিকে। আজ তিনি বলিউডের উজ্জ্বল তারাদের একজন। প্রযোজক হিসেবেও এগিয়ে প্রিয়াঙ্কা।
ইরফান খান
শুরু থেকেই ইরফান চেয়েছিলেন অভিনেতা হতে। অভিনেতা না হলে হয়তো ক্রিকেটার হতেন। ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’ থেকে পাস করে সোজা চলে আসেন মুম্বাইয়ে। শুরু এক নিদারুণ সংগ্রামের। তারপর তাঁর সাফল্যের কথা কারও অজানা নয়। আজ ইরফান নেই। তাঁর শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।
দীপিকা পাড়ুকোন
বিখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোনের কন্যা দীপিকা। শুরুতে বাবার পথেই হেঁটেছিলেন তিনি। তবে হঠাৎই দীপিকা ফ্যাশনের দুনিয়ায় নাম লেখান। এরপর একের পর এক সাফল্যের সিঁড়িতে চড়েছেন তিনি। শাহরুখ খানের হাত ধরে তাঁর বলিউডে অভিষেক। এরপর পিকু, পদ্মাবতী, মাস্তানি, লক্ষ্মীসহআরও নানা রূপে দীপিকা মুগ্ধ করেছেন বারবার। আজ এই বলিউড নায়িকা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। এ মুহূর্তে বলিউড নায়িকাদের মধ্যে তাঁর পারিশ্রমিক সবচেয়ে বেশি।
আয়ুষ্মান খুরানা
আয়ুষ্মানের বাবা পেশায় জ্যোতিষী। মাঝেমধ্যে অল্পবিস্তর কবিতা লেখেন। আয়ুষ্মানও বাবার মতো কবিতা লিখতে ভালোবাসেন। সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করলেও ধীরে ধীরে অভিনয়ে পা রাখেন তিনি। নাটক, পথনাটক, বেতার, টেলিভিশনে অভিনয়ের পর হিন্দি ছবিতে সুযোগ পান আয়ুষ্মান। তবে তাঁর এই পথ ছিল সংঘর্ষে ভরা। কারণ, তাঁর কোনো গডফাদার ছিল না, ছিল না ‘তারকা সন্তান’-এর তকমা। তবে আয়ুষ্মানের তেজ দমানো যায়নি। ভিকি ডোনার ছবি দিয়ে নিজের জাত চিনিয়ে দেন আয়ুষ্মান। এরপর থেকে সফলতা তাঁর ছায়াসঙ্গী।
আনুশকা শর্মা
সেনা কর্মকর্তার কন্যা আনুশকা। তিনি এই পরিচয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করেন। বেঙ্গালুরুতে বেড়ে ওঠা আনুশকা চেয়েছিলেন সাংবাদিক অথবা মডেল হতে। তারপরও অভিনয়ে পা রাখেন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই আনুশকা যশ রাজ ব্যানারের মতো প্রযোজনা সংস্থার রাব নে বানা দি জোড়ি ছবিতে কাজের সুযোগ পান। আর তাতে শাহরুখ খানের মতো সুপারস্টারকে নায়ক হিসেবে পান। বলিউডের তিন খানের সঙ্গেই তাঁর সুপারহিট ছবি আছে। প্রযোজক হিসেবেও আনুশকা এখন বলিউডে বেশ এগিয়ে।
রাজকুমার রাও
অভিনয় বিষয় নিয়ে স্নাতক করেছিলেন রাজকুমার। দিল্লির গুরগাঁওতে বেড়ে ওঠা। মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ। শাহরুখ খানের মতো তারকা তাঁকে সব সময় প্রেরণা দিয়ে এসেছেন। তবে একটু অন্য পথে হেঁটেছিলেন রাজকুমার। বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির বাইরে অন্য ছবিতে তাঁকে বেশি দেখা যায়। শাহিদ, ট্র্যাপড, সিটিলাইটস, আলিগড়, নিউটন-এর মতো বিষয়নির্ভর ছবিতে অভিনয় করে হিন্দি ছবির দুনিয়ায় এক নতুন ধারা উন্মুক্ত করেন তিনি।
বিদ্যা বালান
বলিউডের শক্তিশালী অভিনেত্রীদের মধ্যে বিদ্যা একজন। মনেপ্রাণে তিনি অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। স্নাতকোত্তর পাস করে পুরোপুরি অভিনয়ে মন দেন বিদ্যা। ‘হাম পাঁচ’ ধারাবাহিকের মধ্যে পরিচিতি পেয়েছিলেন বিদ্যা। তবে তাঁর লক্ষ্য ছিল সিনেমা। গৌতম হালদার পরিচালিত ভালো থেকো ছবি দিয়ে বিদ্যার সিনেমায় অভিষেক। এরপর একাধিক সফল ছবিতে বিদ্যা প্রমাণ করেছেন, তাঁর মতো দাপুটে অভিনেত্রীর সংখ্যা বলিউডে হাতে গোনা।
নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী
উত্তর প্রদেশের ছোট্ট শহর বুধানায় শৈশব থেকে যৌবন কেটেছে নওয়াজের। আর্থিক অনটনের মধ্যেও তিনি রসায়ন নিয়ে স্নাতক করেন। তবে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামি (এনএসডি) থেকে পাস করে সোজা চলে আসেন মুম্বাইয়ে। বলিউডের নানান সুপারহিট ছবিতে নায়কের পাশে ছোটখাটো চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। এরপর নওয়াজই নায়ক হিসেবে একাধিক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন। বলিউডের তথাকথিত সুদর্শন নায়কের ইমেজ তিনি ভেঙে দিয়েছিলেন। শুধু প্রতিভার জোরে নায়ক হওয়া যায়, তা নওয়াজ প্রমাণ করেছেন।
কঙ্গনা রনৌত
বলিউডের স্বজনপ্রীতি নীতি নিয়ে প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন কঙ্গনা। চাঁছাছোলা বক্তব্যের জন্য প্রায়ই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। হিমাচল প্রদেশের এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম তাঁর। কঙ্গনার মা ছিলেন পেশায় শিক্ষিকা। কঙ্গনার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। পরে দিল্লি এসে মডেলিং জগতে পা রাখেন এই পাহাড়ি কন্যা। এরপর নানান চড়াই–উতরাই পেরিয়ে নিজ যোগ্যতায় বলিউডে জায়গা করে নেন কঙ্গনা। আজ তিনি বলিউডে ‘রানি’র আসনে বিরাজ করছেন।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply